কিশোরগঞ্জ নিউজ :: কিশোরগঞ্জকে জানার সুবর্ণ জানালা


বাজিতপুরে তুচ্ছ ঘটনায় শতাধিক দোকান ভাঙচুর

 মোহাম্মদ খলিলুর রহমান, বাজিতপুর | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, রবিবার, ৭:১৮ | বাজিতপুর 


কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে বিকাশ এর লেনদেনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় ৪ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় শতাধিক দোকান ভাঙচুর করেছে উভয়পক্ষ। এতে বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েছেন সাধারণ দোকানিরা।

শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার সরারচর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

আতঙ্কে রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে দোকানপাট বন্ধ করে রেখেছেন অন্যান্য দোকানিরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫টার দিকে সরারচর বাজারে সিএমবি রোডের জাহিদের বিকাশের দোকানে অপরিচিত তিনজন লোক এসে বিকাশের মাধ্যমে ২৮ হাজার ৫শ’ টাকা জরুরি ভিত্তিতে পাঠানোর তাগিদ দিলে দোকানি তার নাম্বার (০১৭৩৪২৮৪৮৭০) থেকে টাকা পাঠান।

তখন একজন লোক টাকা নিয়ে আসতেছে বলে বাইরে অপেক্ষা করেন। টাকা পাঠানোর কয়েক মিনিট পরে একটি অটোরিকশা ও চালককে জিম্মায় রেখে বাকি দু’জনই দোকান থেকে চলে যায়।

আনুমানিক ৩০ মিনিট পরে পার্শ্ববর্তী দোকানের মোটর বাইক মিস্ত্রী মামুনের মাধ্যমে মুঠোফোনে দক্ষিণ সরারচর এলাকার ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সুজন মিয়া জাহিদকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে বলেন। মামুন তাকে বাজারের ছাগল মহলের সুজন মেম্বারের কাছে নিয়ে গেলে জিম্মায় রাখা অটোরিকশাটি নিয়ে আসতে চাপ প্রয়োগ করেন।

বিকাশের দোকানি জাহিদুল ইসলাম মিঠু গাড়ি ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানালে সুজন মেম্বার তাকে মারধর করেন বলে জাহিদ অভিযোগ করেন।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সন্ধ্যা ৭টার দিকে দুই পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পাল্টাপাল্টি দোকান পাট ভাঙচুর করে রাত প্রায় ১১টা পর্যন্ত।

দক্ষিণ সরারচরের সুজন মেম্বারের লোকজন খালেকের ভান্ডার জাহিদের এলাকার লোকজনের দোকানপাট ভাঙচুর করে। অন্যদিকে জাহিদের গ্রামবাসীরা দক্ষিণ সরারচরের লোকজনের দোকানপাট ভাঙচুর করে। এতে করে ক্ষতির মুখে পড়েন সাধারণ ব্যবসায়িরা।

পরদিন রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাজারের সকল ব্যবসায়িরা একত্রিত হয়ে বাজারের দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাটের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখেন।

সবজি ব্যসায়ী মো. আসলাম উদ্দিন বলেন, সবজি বিক্রি করে কোন রকমে কষ্টে আমার সংসার চলে। আমি কি দোষ করেছি, এখন আমার ক্ষতিপূরণ কে দিবে?

সরারচর ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার সুজন মিয়া তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন।

জাহিদুর রহমান মিঠু জানান, আমি গতকাল বিকালে বিকাশে টাকা পাঠিয়েছিলাম। টাকা না দেয়ার জন্য আমার সাথে প্রতারণা করে একটি চক্র। এই চক্রের অন্যতম সুজন মেম্বার আমাকে লোক মারফতে ডেকে নিয়ে টাকা না দিয়ে উল্টো আমাকে মারধর করে। আমার গ্রামবাসীরা প্রতিবাদ জানালে তাদের দোকানপাট ভাঙচুর করে।

সরারচর বাজার শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি হাজী সাইদুর রহমান জানান, আল্লাহর অশেষ রহমতে বড় ক্ষতি থেকে সরারচর বাজারের ব্যবসায়ীরা বেঁচে গিয়েছে। আহতরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছে। আজ সকালে বাজিতপুর উপজেলা চেয়ারম্যান, বাজিতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বাজিতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সরারচর বাজার শিল্প ও বণিক সমিতির সদস্যরা বসেছিলাম। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, দুই পক্ষের ৫ জন ৫ জন ১০ জন বাজার শিল্প ও বণিক সমিতির সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আগামীকাল ১৮ সেপ্টেম্বর বেলা ১২টার দিকে ইউএনও অফিসে বসবো। সেখানে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বন্ধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে বলা হয়েছে।

বাজিতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, বিকাশে লেনদেনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া খবর পেয়ে প্রথমে পুলিশ পাঠাই। পরে আমি নিজে আরো পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। বাজিতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে আসেন। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি।


[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ি নয়। মতামত একান্তই পাঠকের নিজস্ব। এর সকল দায়ভার বর্তায় মতামত প্রদানকারীর]

এ বিভাগের আরও খবর