কিশোরগঞ্জ নিউজ :: কিশোরগঞ্জকে জানার সুবর্ণ জানালা


কুলিয়ারচরে শ্মশান দখলের চেষ্টার প্রতিবাদে রানা দাসগুপ্তের আল্টিমেটাম

 স্টাফ রিপোর্টার | ৩ জুন ২০২২, শুক্রবার, ৯:৩৪ | বিশেষ সংবাদ 


কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে পূর্ব গাইলকাটার শ্মশান দখলের চেষ্টার প্রতিবাদে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (৩ জুন) বিকালে শ্মশান সংলগ্ন এলাকায় এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। তিনি আগামী ১০ দিনের মধ্যে শ্মশানে যাওয়ার রুদ্ধ করা পথটি খুলে দেওয়ার এবং শ্মশানের জমি জবরদখলের পাঁয়তারা থেকে সরে আসার ব্যাপারে আল্টিমেটাম দিয়েছেন।

এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, স্থানীয় নির্বাচনই হোক, জাতীয় নির্বাচনই হোক যারা সংখ্যালঘুদের জায়গাজমি দখল করে, শুধু সংখ্যালঘু জনগণ নয়, ধর্মীয় সংখ্যাগুরু জনগণের দুর্বল কোন অংশের উপর যারা অত্যচার চালায়, যারা আমাদের মা-বোনদের উপর নির্যাতন চালাতে কুণ্ঠাবোধ করে না, যারা দুর্নীতিবাজ, যারা ভূমিখেকো, আপনারা আগামী কোন নির্বাচনে তাদেরকে মনোনয়ন দেওয়ার চেষ্টা করবেন না।

যদি মনোনয়ন দেয়া হয়, ওই দুর্নীতিবাজ, ভূমিখেকোকে আমাদের ভোট দেয়া সম্ভব নয়। এই না শব্দটি আজকে শুধু কুলিয়ারচর উপজেলার সংখ্যালঘুদের শব্দ নয়, গোটা বাংলাদেশের ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়েরও এ শব্দটি। এ বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে রাজনীতি-রাষ্ট্রনীতি এবং স্থানীয় প্রশাসন স্থানীয় রাজনীতি যাতে জনগণের পক্ষ অবলম্বন করে, এ বিষয়টিকে বিবেচনা করেই আপনারা যদি এগিয়ে যেতে পারেন, তবেই আমরা আপনাদের সাথেই আছি, আমরা আপনাদের সাথেই থাকবো।

তিনি আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে শ্মশানে যাওয়ার রুদ্ধ করা পথটি খুলে দিতে হবে এবং শ্মশানের জমি জবরদখলের পাঁয়তারা থেকে সরে আসতে হবে। হিন্দু সাধারণের ব্যবহারের শ্মশানকে উন্মুক্ত করে দিতে হবে। যদি তা না দেওয়া হয়, তবে শ্মশানের ঘটনার সাথে আওয়ামী লীগের নাম জড়িয়ে যিনি অপকর্মগুলো করেছেন, তার বিরুদ্ধে সারাদেশে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেওয়া হবে। এটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও প্রচারিত হয়ে যাবে। এতে আন্তর্জাতিকভাবে নেতিবাচক ধারণার তৈরি হতে পারে। সেটি হলে আমরা দায় দায়িত্ব নেব না।

কুলিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র ইমতিয়াজ বিন মুসা জিসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জিপেন্দ্রলাল ভৌমিক, সাধারণ সম্পাদক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার, সাবেক সহ-সভাপতি এডভোকেট তাপস কুমার পাল এবং ঢাকা মহানগর সভাপতি মনিন্দ্র কুমার নাথ বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন।

বক্তারা তাদের বক্তব্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া একজন জনপ্রতিনিধির ৪শ’ বছরের পুরনো শ্মশান খলা দখলের চেষ্টাকে ঘৃণ্য তৎপরতা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, জনপ্রতিনিধিরা ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবার অধিকার সুরক্ষার শপথ নেন। কিন্তু এখানে ভূমিদস্যুদের ঠেকানোর বদলে শ্মশানে দেয়াল দিয়ে দেয়া হয়েছে। এসব ভূমি দখলবাজদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া উচিত।

বক্তারা আরো বলেন, শ্মশানঘাট আছে দেখার পরও সেখানে জায়গা কেনা অপরাধ। প্রকৃত বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হলে এই জনপ্রতিনিধি এটা পারতেন না, উনি বোধহয় অনুপ্রবেশকারী।

প্রতিবাদ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এডভোকেট ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ দত্ত প্রদীপ, ড. রতন চন্দ্র ঘোষ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এর আগে শ্মশানখলায় সাম্প্রতিক বর্বরোচিত হামলায় বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ক্ষতিগ্রস্থ কুলিয়ারচর পৌরসভার পূর্ব গাইলকাটা শ্মশান পরিদর্শন করেন।

প্রসঙ্গত, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর পৌরসভার পূর্ব গাইলকাটায় গত ২৫ মে মধ্যরাতে শ্মশানের বাউন্ডারি ওয়াল ভেঙে ফেলে অজ্ঞাত কিছু লোক। রাতের আঁধারে ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের মধ্যেই পরদিন সকালে ফের শ্মশানের স্থানে ট্রাক্টর দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ইয়াছির মিয়ার লোকজন বালু ভরাট করতে গেলে সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজন বাধা দিলে তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।

শ্মশান জবরদখল চেষ্টায় জড়িতরা কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালালে এতে ঘটনাস্থলেই পাঁচজন আহত হন। আহতরা হলেন- সুমন ঘোষ (৪০), কৃষ্ণ চন্দ্র ঘোষ (৬০), রেখা ঘোষ (৫০), নয়ন ঘোষ (৪২) ও পান্না ঘোষ (৫২)।

হামলার ঘটনায় স্থানীয় বাবুল মিয়া (৪৫) সুমন মিয়া (২৩), রানা মিয়া (২৬), সুমন মিয়া (৩২)সহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। তারা সবাই বর্তমানে জামিনে রয়েছে।

এলাকাবাসী জানান, কুলিয়ারচর পৌরসভার পূর্ব গাইলকাটা (ঘোষপাড়া) শ্মশান ঘাটে প্রায় ৪০০ বছর যাবৎ ঘোষপাড়ার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন মৃতদেহ সৎকার করে আসছে। গত ৫-৭ বছরে শ্মশান ঘাটের আশেপাশে কুলিয়ারচর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ইয়াসির মিঞাসহ স্থানীয় লোকজন আবাসিক ভবন নির্মাণ করেছে।

আবাসিক ভবনে লোকজনের বসবাসের সুবিধার্থে ধীরে ধীরে শ্মশান এলাকার চারপাশ ইতিমধ্যেই দেয়াল দিয়ে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। শ্মশানের চারপাশের বাড়িঘর ও নির্মাণাধীন স্থাপনা থেকে ময়লা ফেলে এর পবিত্রতা নষ্ট করা হচ্ছে।

বর্তমানে শ্মশানে লাশ প্রবেশের রাস্তা পর্যন্ত বন্ধ করে ফেলা হয়েছে। অনেকটা ঘুরপথে শ্মশানে লাশ দাহ করতে নিয়ে যাওয়া হয়।

উপর্যুপরি ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় এলাকার মানুষ শ্মশানে হামলার প্রতিবাদে মিছিলও করেছে।


[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ি নয়। মতামত একান্তই পাঠকের নিজস্ব। এর সকল দায়ভার বর্তায় মতামত প্রদানকারীর]

এ বিভাগের আরও খবর